ফ্রান্সে ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভ, গ্রেপ্তার সাড়ে ৪ শতাধিক

ফ্রান্সে পেনশন পদ্ধতিতে আনা পরিবর্তনের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে লাগাতার প্রতিবাদ ও বিক্ষোভে একদিনে ৪৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া সংঘের্ষে নিরাপত্তা বাহিনীর ৪৪১ জন সদস্য আহত হয়েছেন।

আজ শুক্রবার (২৪ মার্চ) ফ্রান্সের সম্প্রচার সংবাদমাধ্যম সি নিউজ চ্যানেলকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গেরাল্ড ডারমানিন।

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) নবম দিনের বিক্ষোভে দশ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছে বলে জানিয়েছে ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে ট্রেড ইউনিয়নগুলো বলছে প্রতিবাদে সামিল হয়েছে ৩৫ লাখ মানুষ।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন রাজধানী প্যারিসের রাস্তাতেই ৯০৩টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

বোর্দো শহরের ঐতিহাসিক অষ্টাদশ শতাব্দীর টাউন হলটিতে কে আগুন লাগিয়েছে তা এখনও জানা যায়নি। তবে দমকল বাহিনী কয়েক মিনিটের মধ্যেই এই আগুন নিভিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছে।

প্যারিসে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ চলার মধ্যেই কোথাও কোথাও পুলিশ ও মুখোশধারী বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এই বিক্ষোভকারীরা কিছু দোকানের জানলা ভেঙেছে, একটি ম্যাকডোনাল্ডের রেস্তরাঁয় হামলা করেছে এবং রাস্তার ওপর একটি ছোট দোকান জ্বালিয়ে দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী এলিসাবেথ বর্ন এক টুইট বার্তায় বলেছেন: বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং ভিন্ন মত পোষণ নাগরিকের অধিকার। কিন্তু যেসব সহিংসতা এবং জানমালের ক্ষয়ক্ষতি আমরা প্রত্যক্ষ করছি তা গ্রহণযোগ্য নয়। পুলিশ এবং উদ্ধারকারী বাহিনী যাদের মোতায়েন করা হয়েছে তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানাই।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিক্ষোভকারীদের এভাবে ফুঁসে ওঠার পেছনে ছিল গত বুধবার (২২ মার্চ) প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর টেলিভিশনে দেয়া একটি সাক্ষাৎকার।

ফ্রান্সে পেনশন পদ্ধতিতে আনা পরিবর্তনের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে লাগাতার প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় পরিষদে চূড়ান্ত ভোটাভুটি ছাড়াই ৪৯:৩ নামে সংবিধানের বিশেষ একটি ধারা প্রয়োগ করে সরকার অবসর গ্রহণের বয়স সংক্রান্ত এই সংস্কার পাশ করিয়েছে বলে ম্যাক্রোঁ এই সাক্ষাৎকারে জানান।

সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন অর্থনৈতিক প্রয়োজনে এই সংস্কার আনা হচ্ছে। এর ফলে তিনি জনপ্রিয়তা হারালেও তা তিনি মেনে নিতে প্রস্তুত।

প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ সংসদকে পাশ কাটিয়ে পেনশন পদ্ধতিতে এই সংস্কার আনায় ক্রুদ্ধ হয়েছে বহু মানুষ। এই সংস্কার অনুযায়ী অবসর গ্রহণের বয়স ৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬৪ করা হয়েছে।

এই সংস্কারের পেছনে যুক্তি তুলে ধরে ম্যাক্রোঁ বলেন, তিনি যখন ক্ষমতায় আসেন তখন পেনসনভোগীর সংখ্যা ছিল এক কোটি, এখন সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৭০ লাখে।

তিনি বলেন, আমরা যত দেরি করব, তত এই সংখ্যা বাড়বে এবং (কোষাগারে) ঘাটতিও বাড়বে। এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার সঠিক সময়।

এদিকে দেশজুড়ে চলা বিক্ষোভ আর অসন্তোষে ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হয়েছে। তেল পরিশোধনাগার আর তেলের ডিপো অবরোধ করার কারণে জ্বালানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে।

ল্য ফিগারো ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে বৃহস্পতিবারের মধ্যে ১৫ শতাংশ পেট্রল স্টেশনে পেট্রল ও ডিজেল ফুরিয়ে গেছে।

ইউনিয়নগুলো এবং রাজনৈতিক বামপন্থীরামনে করছেন সাম্প্রতিক দফার এই হরতাল সফল হয়েছে। তবে এই প্রতিবাদ শেষ পর্যন্ত কতদূর গড়াবে সে নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //